আধুনিক সরঞ্জামে বদলে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নতুন যুক্ত হচ্ছে ড্রোন
বিস্তারিত
আধুনিক সরঞ্জামে বদলে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নতুন যুক্ত হচ্ছে ড্রোন
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ফাইল ছবি
অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থায় আধুনিক সরঞ্জামে বদলে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতা টার্নটেবল লেডার, রিমোট কনেট্রোল ফায়ারফাইটিং ভেহিক্যাল এবং ড্রোন যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক বহরে।
আজ রবিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। এ সময় তিনি অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের জন্য আধুনিক ও উন্নত সরঞ্জাম আনার কথা জানান।
সেই সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকি মোকাবেলায় সকল দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী ফায়ার সার্ভিস কতটা প্রস্তুত সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ তথা উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশের বর্ধিত সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আগামী দিনের বর্ধিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে কাজের ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসহ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বর্ধিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার ডিজি বলেন, ‘২০০৯ সালে এ অধিদপ্তরের জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার, এখন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৮ জন; ফায়ার স্টেশন ছিল ২০৪টি, এখন হয়েছে ৪৯৫টি; আগুন নেভানোর গাড়ি ছিল ২২৭টি, এখন হয়েছে ৫৫৮টি; ফায়ারফাইটিং পাম্প ছিল ৪৫০টি, এখন হয়েছে ১৫৪৬টি; অ্যাম্বুলেন্স ছিল ৫০টি, এখন হয়েছে ১৯২টি; বিশেষায়িত গাড়ি ছিল ৫টি, এখন হয়েছে ৮৮টি; অগ্নিনির্বাপণের ক্যাপাসিটি ২৪ তলা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।
’
আগামীতে ফায়ার সার্ভিসের জনবল কাঠামো ৩০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা প্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এছাড়া সকল প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে সারা দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৭৩৫টিতে উন্নীত করা হবে। নিয়মিত বিরতিতে নতুন নতুন ফায়ার স্টেশন চালু হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে ফায়ার সার্ভিসের সেবার দরজা সম্প্রসারিত হচ্ছে। সকল বিভাগে টার্নটেবল লেডার গাড়ি প্রদানের মাধ্যমে তার সময়েই বিভাগীয় পর্যায়ে বহতুল ভবনে অপারেশনাল কাজ পরিচালনার সক্ষমতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নত হচ্ছে।
উন্নয়নের এই ধারা চলমান রয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা সক্ষমতা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে।’
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ফায়ার সার্ভিসের সাফল্যের এই ধারায় সবশেষ সংযুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজীবন রেশন সুবিধা। গত ১ জুলাই (২০২৩) বা তার পরে অবসরে গমনকারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আজীবন রেশন সুবিধা পাবেন। গত ১৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলে মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
রেশন হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রতিমাসে ২০ কেজি চাল (সিদ্ধ/আতপ), ২০ কেজি আটা, ২ কেজি চিনি, সাড়ে ৪ লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি ডাল পাবেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার-এর সময়ে মুন্সিগঞ্জে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এই একাডেমি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি হবে।’’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ কার্যক্রম, ক্রয় প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সকল ক্রয় প্রক্রিয়া সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এর আলোকে গত অর্থ বছরে মোট ৪৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে এবং তার মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যাদেশ পেয়ে কাজ সম্পাদন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের একটিও ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজনের নামের প্রতিষ্ঠান নয়।’’
ফায়ার সার্ভিসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিসের ‘স্টেশন অফিসার’ ও অন্যান্য অফিসার পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হচ্ছে পিএসসির মাধ্যমে। অফিসার পদের নিম্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে।’’
বদলির প্রক্রিয়া সম্পর্কে মহাপরিচালক বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার বদলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পাদন করে থাকে। আর অন্য পদগুলোতে বদলি করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বদলি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।’
জানা গেছে, মহাপরিচালক হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে দায়িত্ব প্রহণের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ধারা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়েছে। অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা বেড়েছে। সেবা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুবিধাভোগী মানুষের জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণকালে আত্মাহুতি দেওয়া ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। বর্তমান মহাপরিচালকের সময়েই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটারগণ তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণ থেকে সুনাম বয়ে এনেছেন।
তবে উন্নয়নের চলমান ধারা বাধাগ্রস্ত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ, বেনামে মিথ্যা অভিযোগ করে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এমন তথ্য পেলে যাচাই-বাছাই ব্যতীত তা বিশ্বাস না করার জন্য সংবাদ বা মতামত পরিবেশন না করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।